ল' অব এট্র‍্যাকশ্যন: Law of attraction

ল' অব এট্র‍্যাকশ্যন: Law of attraction

অনিবার্যভাবে আজ একটা বৈপ্লবিক চেতনার ব্যপারে আলোচনা করতে হচ্ছে। সারা পৃথিবীর সক্রিয় এসোটেরিক এজেন্ডা (বাতেনীয়্যাহ গোষ্ঠী) বর্তমান সময়ে একটি আকিদা বা বিশ্বাসকে অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে মাঠে নিয়ে নেমেছে। যার নাম দিয়েছে 'ল অব এট্রাকশন' বা আকর্ষনের নীতি। মানুষ এসময়টাতে স্রোতের মত এই মতাদর্শকে গ্রহন করে নিচ্ছে। কেউ বা কৌতূহল প্রবন হয়ে এই ফাদে পা দেয় এবং নিজেদের অজান্তেই সবচেয়ে দামী জিনিসঃ ঈমানকে হারায়।

সকল মিস্টিক্যাল/মেটাফিজিক্যাল ও প্যাগান ফিলোসফিগুলো এই নীতির সাথে একদম মানিয়ে নিয়েছে যার জন্য এটা সকল মিস্টিসিস্টদের কাছেই পরম পূজনীয়। এই ল অব এট্র‍্যাকশন এর আদর্শ তাদের দ্বারাই পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত এবং প্রচারিত যারা দাজ্জালের আবির্ভাবের প্রতীক্ষারত,যারা দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বেই তাকে রব হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে।


আমাদের দেশে মিস্টিসিজম(কালোজাদু,উইচক্রাফটের বাম রাস্তায় হাটার বিশ্বাসগত মাজহাব বা পথ) যখন প্রকাশ্যে প্রচার পেতে শুরু করে তখন এই অজানা শব্দগুচ্ছ প্রায়ই কৌতূহল জাগায়। Law of attraction এর ডক্ট্রিনের সর্বপ্রথম কথক হলেন ফিনিয়াস কুইম্বি, তিনি একজন বিখ্যাত সম্মোহনকারী ছিলেন। তিনি একটি অপ্রকাশিত আর্টিকেলে বলেন, শরীরের রোগের সূত্রপাত ঘটায় সর্বপ্রথম মন। মন যখন একটি বিশেষ রোগে রোগাক্রান্ত হবার কথা চিন্তা করতে থাকে তখন সেটা শরীরে বাসা বাধে। কুইম্বির এই চিন্তাকে পুজি করে স্পিরিচুয়ালিস্টরা ইন্টারন্যাশনাল নিউ থট এলাইয়েন্স(INTA) গঠন করে। তারা প্রচার করতে থাকে চিন্তার এই আকর্ষনের নীতি অন্য সকল ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ওরা বিষয়টিকে আরো সুসংহত ও ব্যাপকতা দিয়ে একে সংজ্ঞায়িত করে। একে ওরা নিউ থট নামে প্রচার করতে থাকে। নিউ থটের প্রচারকের ভূমিকায় থাকে এই INTA আম্ব্রেলা সংগঠন। এর ছত্রছায়ায় বিচিত্র নামে আরো অনেক সংগঠন কাজ করতে থাকে। International New Thought alliance এর new thought এর বিশ্বাসগত অন্যান্য বিষয়বস্তু গুলো হচ্ছেঃ
সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি সব কিছুই একক অস্তিত্ব। সৃষ্টিকর্তা সর্বত্র এবং তিনিই সবকিছু (সর্বেশ্বরবাদ/নন ডুয়ালিজম/মনিজম/প্যান্থেইজম) প্রত্যেক মানুষ একেকটি ডিভাইন অর্গানিজম। আর তার মধ্যে ক্ষমতার সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে। মহাবিশ্ব হচ্ছে মহাজ্ঞানের আধার যা থেকে একজন ব্যক্তি সীমাহীন জ্ঞান আহরন করতে পারে।
The chief tenets of New Thought are:
Infinite Intelligence or God is omnipotent and omnipresent.Spirit is the ultimate reality.True human self-hood is divine.Divinely attuned thought is a positive force for good.All disease is mental in origin.Right thinking has a healing effect.

অর্থাৎ নিউথট প্রধানত স্পিরিটিজম ও নন ডুয়ালিস্টিক স্পিরিচুয়ালিজমেরই মডিফাইড ভার্সন। এই নিউথট থেকে বেশ কিছু অর্গানাইজেশনের উৎপত্তি ঘটেছে এর মধ্যে ইউনিটি চার্চ,ডিভাইন সাইন্স,রিলিজিয়াস সাইন্স অন্যতম।একই ধ্যানধারণা রাখে Jewish Science, Centers for Spiritual Living , Unity, Father Divine,thought network ইত্যাদি অর্গানাইজেশন। আর্নেস্ট হোল্মেস রিলিজিয়াস সাইন্স অর্গানাইজেশন এর প্রতিষ্ঠাতা যার আন্ডারে আরো অসংখ্য অর্গানাইজেশন কাজ করছে। আর্নেস্ট স্পিরিচুয়ালিস্টদের কাছে বিখ্যাত বই লেখেন যার নাম The science of mind।
নিউ থট মুভমেন্ট স্বামী বিবেকানন্দের কথা প্রচার করে এবং এদের সম্মেলনে দালাইলামার মত ব্যক্তিত্বরাও অংশ গ্রহন করে।

ল অব এট্রাকশ্যনের বিশ্বাসগত সারবস্তুঃ
এ বিলিফ আপনাকে শেখাবে যে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ত্ত্বা মূলত আপনিই। আপনি যা চিন্তা করতে থাকেন সেই থট ফ্রিকোয়েন্সি প্রকৃতিতে ভাসতে থাকে, এবং কোন কিছুর ব্যপারে যা এক্সপেক্ট করেন সেই পরিবেশ আপনাকে এট্রাক্ট করে নিয়ে নেবে। কারন আপনার শরীরও সাবএটোমিক লেভেলে বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সির কম্পনশীল এনার্জি। তাই আপনার চিন্তা আকাঙ্খিত পরিবেশকে আকৃষ্ট করে। উদাহরণ স্বরূপ- কোন এক ব্যক্তি কোন এক পন্যের ব্যবসায় শুরু করল কিন্তু সেটা কোনভাবেই সাফল্যের মুখ দেখছেনা। তিনি এবার 'এট্রাকশ্যনের নীতি' মেনে কল্পনা করতে লাগলেন যে তার পন্য কিনতে লোকে ভীড় করছে। তিনি যোগান দিয়ে কুলিয়ে উঠছেন না এতই চাহিদা তৈরি হয়েছে.. ! (এ কল্পনার প্রক্রিয়াকে আমাদের দেশের অকাল্ট অর্গানাইজেশন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নাম দিয়েছে মনছবি) এর পরেই ওই লোক দেখলো সত্যিই বাস্তব জীবনেও তার ব্যবসায়ের বিক্রি বেড়ে গেছে। Esoteric occultist টা এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে যে যখন ওই লোক পন্য বিক্রি বৃদ্ধির কল্পনা শুরু করে তখন তাদের মস্তিষ্ক একধরনের বেতার তরঙ্গ উৎপন্ন করে তারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এবং আকাঙ্ক্ষার বস্তুকে প্রভাবিত করতে থাকে যেহেতু প্রত্যেকটা বস্তুই বিভিন্ন ওয়েভলেন্থের স্বতন্ত্র ফ্রিকোয়েন্সিতে থাকা এনার্জি ভাইব্রেশন। তাই সব এন্টিটি আপনার চাহিদামোতাবেক মাত্রায় ম্যানিপুলেট হবে।



একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার যে, ল অব এট্র‍্যাকশ্যন বিশ্বাস করে সৃষ্টিজগত ও স্রষ্টা=এক অস্তিত্ব! অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা বলে আলাদা কেউ নেই! সবকিছুই সৃষ্টি আবার সব কিছুই স্রষ্টা! একে বলে ননডুয়ালিজম অথবা মনিজম(এসেন্সঃসর্বেশ্বরবাদ)। আর সমস্ত অস্তিত্বটা এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি আর ভাইব্রেশনে প্রতিষ্ঠিত। যা প্রকৃতিতে আছে তার সব কিছুই এনার্জি। প্রত্যেক বস্তুই বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে ভাইব্রেশনরত এনার্জি। এনার্জি ভাইব্রেশনের তারতম্যের জন্য প্রত্যেক বস্তুর সলিডনেস একেক রকম। এজন্য দেওয়াল ভেদ করা দুরূহ, পাথর আরো কঠিন আবার পানি বায়ুসহ অনেক সহজভেদ্য জিনিস আছে। আর এম্পটি স্পেস বলে কিছুই নেই, দৃশ্যমান ফাকা স্থান বলে কিছু নেই।ফাকা স্থানগুলোতে জুড়ে আছে ইথার! এই ইথার ফিল্ডটিই ম্যানিপুলেটযোগ্য। এই কাজটি দূর থেকেই করতে পারে আমাদের থট এনার্জি/ব্রেইনওয়েভ! ওদের তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের চিন্তাগুলোও এনার্জি ভাইব্রেশন ব্রেইন থেকে বিভিন্ন ওয়েভলেন্থের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভে ভাসতে থাকে। এজন্য আপনি শুধু চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূরবর্তী বস্তুকে নড়াতে পারবেন যাকে টেলিকেনেসিস বলে। যেহেতু প্রত্যেক এনটিটি এনার্জি, আপনার কনসাসনেসকে ব্যবহার করে অবজেক্টের উপর ইন্টারফেয়ারেন্স ঘটাতে পারবেন। সুতরাং এ উপায়ে আশপাশের রিয়েলিটিও একজন এনলাইটেন্ড পার্সন ইচ্ছেমত ম্যানিপুলেট করতে পারবেন! আপনি যা চান সেটা বারবার কল্পনা(কোয়ান্টাম ম্যাথডের ভাষায় মনছবি তৈরি) করতে থাকলে আপনার থট এনার্জি ভাইব্রেশন ওই কাল্পনিক রিয়েলিটি বাস্তবায়িত করতে নিষ্ক্রিয় পারিপার্শ্বিক এনার্জিফিল্ডকে আকর্ষন করে এবং ডিজায়ার অনুযায়ী বাস্তবায়িত করে।এটাই আকর্ষনের নীতির গুহ্য বিলিফ।

ল অব এট্র‍্যাকশন যে ফিলসফি বেজড সেটাকে বলে monism, এর আরো ভেতরে প্রবেশ করলে বেরিয়ে আসবে প্যান্থেইজম(তাওহীদের বিপরীত)। এজন্য এ তত্ত্বকে পছন্দ ও বিশ্বাস করে একটু শিক্ষিত হিন্দু,থিওসফিস্ট, New age movement এর সকল সদস্যরা এবং একই চিন্তাধারার স্পিরিচুয়ালিস্টিক ডক্ট্রিনগুলো এবং অনেক অখ্যাত মিস্ট্রি রিলিজিয়ন,অকাল্টিস্ট,মিস্টিসিজম(যেমনঃ কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম, জিউইশ, নস্টিক ইত্যাদি)...। এরা রিয়েলিটিকে নিজেদের কব্জাবদ্ধ করতে চায়।
ল অব এট্রাকশ্যন সফলায়নে যে কল্পনা করা হয় মিস্টিকরা তাকে বলে ক্রিয়েটিভ ভিজুয়ালাইজেশন(মনছবি)। কোয়ান্টাম ম্যাথডে কোর্স করলে আপনাকে মন ছবি শব্দ দ্বারা পরিচয় করাবে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Creative_visualization

ল এব এট্রাকশন সরাসরি মিস্টিসিজমে সর্বপ্রথম প্রবেশ করে ১৮৭৭ সালে থিওসফির জননী ও অঘোষিত স্যাটানিস্ট ম্যাডাম হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কির বইয়ের মাধ্যমে।এর পরে থেকে সকল স্পিরিচুয়ালিস্টরা একে একে সমর্থন দিতে থাকে। তারা বলতে থাকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাতেই না বরং সকল ক্ষেত্রেই আকর্ষনের নীতি কাজ করবে।

ল অব এট্রাকশন মেইনস্ট্রিমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে ২০০৬ সালে রন্ডা বাইরনের দ্য সিক্রেট মুভিটি রিলিজের মাধ্যমে।
মুভিঃদ্যা সিক্রেট
https://m.youtube.com/watch?v=EC_YmdPy2h0

মিস্টিকরা বলতে থাকে আকর্ষনের নীতি কাজ করে প্রেম জাতীয় রিলেশনশিপ সফল করনে, ব্যবসায়ে সাফল্য, স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে। নিচে দেখুনঃ
চাইবে যা পাইবে তা!!ঃ
https://m.youtube.com/watch?v=5INlyzP8UIc


লেখাগুলা শুধুমাত্র এডুকেশন এর জন্যে ।

Source  : Amsbd

Arjun Deba Nath



Pages